দৈনন্দিন জীবনযাপনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
তাহলে চলো দেরি না করে আজকে আপনাদের সাথে দৈনন্দিন জীবনযাপনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
পেজ সূচিপত্রঃ দৈনন্দিন জীবনযাপনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
দৈনন্দিন জীবনযাপনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- দৈনন্দিন জীবনযাপনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা মোবাইল রিচার্জ করি,টাকা লেনদেন করি, ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করি, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি, পানির বিল পরিশোধ করি। ই-বুক সেবা পাওয়া যায়।
- ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পণ্যে করা এবং বিল পরিশোধ করে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। ইন্টারনেটর মাধ্যমে ঘরে বসে বাস,ট্রেনের টিকিট কটা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যায় এবং সকল চাকরির আবেদন করা যায়।
- বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ওপর ব্যাপক হারে নির্ভর হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা কোনো কিছু কল্পনা করতে পারি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য প্রায় সকল কাজ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করি। যোগাযোগ প্রযুক্তির পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির অনেক অনেক অবদান রয়েছে।
- বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিসীম আমাদের প্রায় সব কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে দিন দিন উন্নয়ন আস্তার অবদান রাখছে। এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করার ফলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আর এটা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যমে সম্ভব হইছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে কী বুঝায়ঃ
- প্রযুক্তি শব্দের ইংরেজি অর্থ হলো (Technology)। Technology এর গ্রিক শব্দ হলো 'Techne' এর অর্থ হলো আর্ট বা শিল্প, এবং (logia) এর অর্থ হলো শব্দ। এই দুটি শব্দের মিলিত হয়ে Technology শব্দটি গঠিত হয়েছে। প্রযুক্তি বলতে সাধারণত ভাবে কৌশল ও প্রক্রিয়ার সমন্বিত জ্ঞানকে বুঝিয়ে থাকে।
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে জড়িত থাকি। প্রায় মানুষেরা জানেনা এই তথ্য ও প্রযুক্তি কী। সহজ কথায় বলতে গেলে তথ্য হলো যে তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য আদান -প্রদান করি। এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তিটি আমরা ব্যবহার করে থাকি সেটাই হলো (ICT) বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
- তথ্য প্রযুক্তির জনকঃ তথ্য প্রযুক্তির জনক বলা হয় ক্লাউডি এলউড শ্যানন (Claude Elwood Shannon) কে। তাকে ১৯১৬ সালে ৩০ এপ্রিল মাসের আমেরিকার মিশিগান রাজ্যের তাকে প্রথম তথ্য প্রযুক্তি জনক অবিহিত করা হয়েছে। সে একজন ছিলেন গণিতবিদ।তিনি গণিতবিদের পাশাপাশি একজন ইলেকট্রনিক ইন্জিনিয়ার ও ক্রিপ্টোগ্রাফার ছিলেন।
- তিনি ১৯৩৭ সালে এম,আই,টি (MIT) এর ছাত্র থাকা অবস্থায় ২৭ বছর বয়সে তিনি ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন থিয়োরি আবিস্কার করেছিলো। তিনি ১৯৪৭৮ সালে ইনফরমেশন থিয়োরি ও ( A Mathematical theory of information) নামে তার যে পেপারটি ছিলো সেই পেপারটিতে প্রকাশিত হয়েছে। তার কারনেই তাকে আইটি বা ইনফরমেশন টেকনোলজির জনক বলা হয়ে থাকে।
বর্তমানে ব্যবহৃত হয় এইরকম দশটি প্রযুক্তির নাম হলেঃ
- মোবাইল
- কম্পিউটারে
- ল্যাপটপ
- ইন্টারনেট
- টেলিফোন
- টেলিভিশন
- ফ্যান
- লাইট
- রেডিও
- ফ্রিজ
মানব জীবনে প্রযুক্তির প্রতিফলন হয় যেভাবেঃ
- বর্তমানে মানব জীবনে প্রায় প্রত্যেকটি কাজ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। পড়ালেখা থেকে শুরু করে প্রায় সকল কাজই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত পণ্যই এখন ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অর্ডার করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে দেশ বিদেশের সকল তথ্য জানতে পারি। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই পড়াশোনার যাবতীয় বিষয়াদি জানতে পারি।
- আজকাল অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে চিকিৎসা সেবা নিতে পারি। এর ফলে আমাদের অর্থ ও সময় দুটোই বেঁচে যায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারি ফলে উপকূল বাসিরা সজাগ হতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির 10 টি ব্যবহারঃ
চিকিৎসায় তথ্য প্রযুক্তিঃ আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসা সেবায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও এর বিকাশ ঘটছে। টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা দুস্ত রোগীরা বিষেশজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারছে। এমনকি ক্যান্সারের মতো মরণঘাতীর চিকিৎসাও করা যাচ্ছে।
কৃষিখাতে তথ্যপ্রযুক্তি: কৃষকরাও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে পারছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে, ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বীজ রোপণ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলা পর্যন্ত সবকিছুই করা যাচ্ছে, ফলে কৃষকের সময় ও অর্থ দুটোই বেচে যাচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিঃ বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় এই শিক্ষাক্ষেত্রে। ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষা দেয়া যাচ্ছে। ভর্তির আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা এবং পরিক্ষার ফলাফল জানা যাচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে।
পরিবেশ ও আবহাওয়াঃ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। ফলে মানুষ আগে থেকেই সতর্ক হতে পারে। বিশেষ করে উপকূল বাসিরা আগে থেকে দূর্ঘটনা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যায়।
বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিঃ বিজ্ঞান ও গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানিরা জটিল কাজগুলো খুব সহজেই সমাধান করছে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করে কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
শিল্প ও সংস্কৃতিতে তথ্যপ্রযুক্তিঃ শিল্প ও সংস্কৃতিতেও তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব অনেক। আগে একটা কার্টুন তৈরি করতে অনেক সময় লেগে যেত যা বর্তমানে খুব অল্প সময়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এনিমেশন কার্টুন বানানো যাচ্ছে। এমনকি সিনেমা নাটকের ক্ষেত্রেও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিঃ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গান শোনা সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে কম্পিউটার গেমস খেলা বইপড়া সব কাজই করে থাকি। এমনকি মাঠে না গিয়েও আন্তর্জাতিক খেলা টিভির পর্দায় উপভোগ করছি।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিঃ বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আর যোগাযোগ করার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার দরকার পড়েনা, ঘরে বসেই ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারি।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিঃ বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংক অনলাইন আওতাধীন। আগে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলন করা হতো যা এখন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি-এম অটোমেটেড টেলার মেশিন থেকে চব্বিশ ঘণ্টা টাকা উত্তলন করা যায়। এছাড়াও মোবাইলর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছি।
প্রচার ও গণমাধ্যম তথ্য প্রজুক্তিঃ বর্তমানে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা যেকোনো খবর খুব দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গণমাধ্যমের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন ধরনের খবরাখবর পড়তে পারছি। এবং টেলিভিশনের চ্যানেল গুলো টিভিতে লাইভ সম্প্রচারণ করার জন্য খুব সহজেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে মানব জীবনের মান সহজ হয়ে উঠেছে।
দৈনন্দিন জীবনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্বঃ
- পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিকতাই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে যতদিন যাই ততই আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছি। তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করে আধুনিক পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হচ্ছে।
- বর্তমান পৃথিবীত তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। জীবন উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এবং মজবুতময় পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত। বিশ্বের যেমন জনসংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে একই সাথে যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে ।
- একটা সময় যখন চিঠি লেখা হতো এক দেশ থেকে অন্য দেশে।তখন সেই দেশের চিঠি পৌঁছানোর জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগতো। কারণ হলো চিঠিগুলো লেখা হতো কাগজে, খামের ওপরে নাম ঠিকানা লিখতে হতো। সেই সব চিঠিগুলো গাড়, ট্রেন, বা জাহাজের মাধ্যমে চিঠিগুলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছানো হতো।
- চিঠির খামের উপর নাম ঠিকানা দেখে বাড়ি বাড়ি যেয়ে পৌঁছায়া দিত।তবে এখন চিঠি লেখা হয় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে।কিন্তু চিঠির সাথে এখন কথা, ছবি, অডিও-ভিডিও পাঠানো যাচ্ছে। এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে।
- তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার এতটাই বেড়ে চলেছে যে বলে শেষ করা যাবে না।
উপস্থাপনাঃ আমাদের মতে দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার একে অপরের উপর নির্ভর করে। তথ্য প্রযুক্তির উপর আমাদের প্রায় প্রত্যেকটি কাজই নির্ভর করতে হয়। এবং আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে এবং রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে জড়িত থাকি।
আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে এবং পোস্ট পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে তাহলে অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন,এবং আপনাদের পরিচিতদের পোস্টটি পড়ার সুযোগ করে দিবেন। আজকে এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ!
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url